লেখক : তাহের চৌধুরী (সুমন), প্রকাশকাল : ২৪ আগষ্ট, ২০১৩ - পোস্টটি 2,633 বার দেখা হয়েছে গত ২২ আগস্ট একটি এসইও বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপে রুমান রাইহান নামে এক ভাই জানতে চেয়েছিলেন নতুন ডোমেইন হোস্টিং সেট আপ দিয়ে সাইটে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টলের পর কি কি করতে হবে। তার প্রেক্ষিতে আমার উত্তরটি আমি ২ টি মন্তব্যে দিয়েছিলাম। আমার সেই কমেন্ট গুলোকে একটু সাজিয়ে বিস্তারিত লিখে আজ আপনাদের জন্য পোস্ট আকারে তুলে ধরলাম। নতুন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী অনেকেই আছেন এই একই সমস্যা পড়ে থাকেন যে কি কি করতে হবে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টলের পর, আর তাঁদের জন্য আজকে লেখাটি শেয়ার করা।
সাইটটি যেহেতু নতুন অবস্থায় ডিজাইন এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি না পাশাপাশি কোন কন্টেন্টই নাই তাই সবার প্রথমে গুগল যাতে সাইটটা ইন্ডেক্স বা তালিকা ভুক্ত না করতে পারে সেইজন্য ইন্ডেক্স অফ করে রাখুন কারণ সাইটে কোন কন্টেন্ট না থাকলে ক্রাউলার এসে কিচ্ছু পাবেন না, শুধু শুধু সার্চ ইঞ্জিনের কাছে সাইটের ইম্প্রেশন নষ্ট হবে। তাই ইন্ডেক্স অফ করে রাখুন। এটি করতে Settings থেকে Reading Settings গিয়ে Discourage search engines from indexing this site অপশনটা ক্লিক করে দিতে হবে। সাইটের ডিজাইন প্লাস ৪/৫ টা কোয়ালিটি কন্টেন্ট দেওয়ার পরই ইন্ডেক্স অন অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিনের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন।
# তারপর, আপনার বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পছন্দ মত থিম বাছাই করে আপলোড করে এক্টিভ করে নিন। প্রয়োজনীয় ডিজাইন ও কাস্টমাইজেশন সেরে ফেলুন সাথে ডিফল্ট পেজ এবং পোস্ট গুলো ডিলিট করে দিন। এবার ডিফল্ট পার্মালিংক (e.g: http://www.taherchowdhury.com/?p=123 ) পরিবর্তন করুন। এই পর্যায়ে এসইও ফ্রেন্ডলি পার্মালিংক স্ট্রাকচারের কথা চিন্তা করে ডিফল্ট পার্মালিংকটাকে http://example.com/postname (রিকমেন্ডেড) অথবা http://example.com/category/postname অথবা আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী সিলেক্ট করুন। (পার্মালিংকে কিওয়ার্ড থাকাটা র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই postname যুক্ত পার্মালিংক দেওয়া উচিৎ। এটা করার জন্য Settings থেকে Permalink Settings যান এবং postname যুক্ত পার্মালিংকটি সিলেক্ট করে সেভ করুন।
# আপনার সাইটের টপিক্স এবং কিওয়ার্ড অনুযায়ী সাইটের টাইটেল, ট্যাগ লাইন এবং ডেসক্রিপশন ভেবে নিয়ে এগুলো চেঞ্জ করে ফেলুন। এবার আপনার সাইটের প্রয়োজনীয় পেজ গুলো খুলে ফেলুন যেমন About us/me, প্রাইভেসি পলিসি (আপনার সাইট অনুযায়ী ভেরি করবে), কন্টাক্ট আস (কন্টাক্ট আস এ কন্টাক্ট ফর্ম এড করার জন্য কন্টাক্ট ফর্ম ৭ প্লাগিন টা এক্টিভেট করতে হবে কিংবা অন্য কোনটা)।
এই পর্যায়ে সাইটে আপনি কি কি বিষয় রাখতে চান কিংবা থাকবে সেগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভেবে নিয়ে, আপনি ক্যাটাগরি তৈরি করবেন, ন্যাভিগেশনের ব্যপারটা খুবই ইমপর্টেন্ট। এই ক্যাটাগরি গুলোর পাশাপাশি কি কি পেজ মেনু বারে দেখাতে চান/রাখতে চান সেই পেজ গুলো (About Us, Contact, Privacy Policy etc) এড করে তৈরি করে নিতে পারেন মেনু বার। সাইডবারে কি কি রাখতে চান সেই গেজেট গুলোও একটা একটা করে এড করে নিন।
# ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস ডিফল্ট ভাবেই মূল ফিড বাদেও বেশ কিছু ফিড জেনেরেট করে যেমন, সিঙ্গেল পোষ্ট ফিড, ক্যাটেগরী ফিড, আর্কাইভ ফিড, কমেন্ট ফিড ইত্যাদি। যেগুলো কোণ ভ্যালুই এড করে না। আমরা মূল ফিডটা রেখে বাড়তি ফিড গুলো রিমুভ করে দিবো। এগুলো রিমুভ করতে dashboard থেকে appearance এর editor থেকে functions.php এ গিয়ে নিচের কোড টুকু বসিয়ে দিন।
remove_action( ‘wp_head’, ‘feed_links’, 2 );# যে কোণ ইউজার ই আপনার সাইটের http://earntricks.com/wp-content/uploads/ এই রকম লিংকে ব্রাউজ করে আপনার সাইটে আপলোড কৃত সকল ফাইল যেমন, ইমেইজ, পিডিএফ, ভিডিও, অডিও দেখতে পারবে। (নিচের ছবিটি লক্ষ্য করলেই বুঝবেন)। এতে করে তারা আপনার সব ফাইলের একসেস সহজেই পেয়ে যাবে।
remove_action( ‘wp_head’, ‘feed_links_extra’, 3 );
# অনেক সময় আপনার পাবলিশ করা পোস্টকে ইডিট করার প্রয়োজন পরবে, ডিফল্ট ভাবে ওয়ার্ডপ্রেস প্রতিটা রিভিশনকে সেভ করে রাখে। যার কারণে দিন কে দিন আপনার ডাটাবেজ এর সাইজ বাড়তে থাকে। প্রতিবার পোস্টটি লোড করার জন্য ডাটা বেসে রিকোয়েস্ট পাঠাই আর সব গুলো সেভড ফাইলই একি সময়ে লোড হয়। এতে করে লোডিং টাইম জনিত সমস্যা বাড়ে।Options All -Indexes
এটা আপনার সাইটের জন্য সমস্যা। তাই এই ওয়ার্ডপ্রেস যাতে রিভিশন সেভ করে না রাখে সেজন্য নিচের কোডটি হোস্টিং থেকে ফাইল ম্যানেজারে গিয়ে public html এর wp-config.php ফাইলে কপি করে দিন।
# অনেক সময় অবাঞ্চিত কমেন্ট আপনার সাইটে এপ্রুভ হয়ে যাবে যা স্প্যামি কিংবা মূলত ডিরেক্ট লিংক বিল্ডিং এর উদ্দেশ্যে, এগুলোকে ম্যানুয়ালি দেখে দেখে এপ্রুভাল দেওয়া বেশ ঝামেলার কাজ। WordPress এর built-in spam প্রটেকশন সিস্টেম আছে যার জন্য আপনাকে একটা প্লাগিন এড করে (একিসমেত প্লাগিন ) সেখানে রেজিস্টারকৃত এপিআই কি টা দিয়ে এক্টিভ করতে হবে।define( 'WP_POST_REVISIONS', false);
পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস ভার্শন , প্লাগিন ডিরেক্ট্রির, wp-config.php ফাইল এবং wp-content ডিরেক্টরি হাইড করতে হবে। প্রথমত ওয়ার্ডপ্রেস ভার্শন হাইড করুন, এটা করার জন্য আপনার হোস্টিং একাউন্টে লগইন করুন file manager এ যান, ওখান থেকে readme.html এবং license.txt ফাইল দুটি খুঁজে নিয়ে রিমুভ করে দিন। কারণ এরাই আপনার সাইটের ওয়ার্ডপ্রেস ভার্শনের সকল তথ্য জমা রাখে।
আর প্লাগিন ডিরেক্ট্রি হাইড করতে হোস্টিং প্যানেলের .htaccess এ গিয়ে, code edit অপশনে গিয়ে নিচের দিকে কোডটি বসিয়ে দিন
# disable plugin directory browsingwp-config.php ফাইল হাইড করতে .htaccess এই বসাতে হবে
Options -Indexes
<Files wp-config.php> order allow,deny deny from all </Files>wp-content ডিরেক্টরি হাইড করতে সি প্যানেলে লগিন করুন, এর পর index manager খুঁজে বের করে প্রবেশ করুন। এবার আপনি Web Root (public_html/www) করুন তারপর এবার আপনি wp-content এ ক্লিক করুন। ৪/৫ টা অপশন পাবেন No Indexing টা সিলেক্ট করে সেভ করে দিন। ব্যাস, হয়ে গেলো কাজ। এভাবেই আপনি আপনার সাইটকে হ্যাকার থেকে দূরে রাখতে পারেন।
এছারাও ওয়ার্ডপ্রসে কিছু মেটা ইনফোরমেশন (ইউন্ডোজ লাইভের Writer লিংক, ভার্শন এবং RSD লিংক ) ডিফল্ট ভাবে শো করে যা থেকে হ্যাকাররা সুবিধা নিতে পারে। শুধু এই কোড গুলো সাইটে রেখে দিয়ে হ্যাকারদের হ্যাক করতে সুবিধা দেওয়ার কোণ মানে হয় নাই। যাই হোক, এগুলো রিমুভ করতে dashboard থেকে appearance এর editor থেকে functions.php এ গিয়ে নিচের কোড টুকু বসিয়ে দিন।
বার বার ভুল ইউজার নেম দিয়ে লগইন করতে গেলে, ওয়ার্ডপ্রেসে লগইন ইরর মেসেজ দেখায়, এমন ERROR: “Invalid username or password”। অনেক সময় হ্যাকাররা এটাকে কাজে লাগায়, একটা সিম্পল ট্রিক্স আপনাকে সম্ভাব্য হ্যাকিং থেকে রক্ষা করতে পারে। এই মেসেজ শো করা থেকে বিরত রাখতে functions.php এ গিয়ে নিচের কোড টুকু বসিয়ে দিন।remove_action( 'wp_head', 'wlwmanifest_link' ) ; remove_action( 'wp_head', 'rsd_link' ) ; remove_action( 'wp_head', 'wp_generator' ) ;
এগুলো ছাড়াও এমন একটি প্লাগিন আপনি ব্যবহার করতে পারেন যা অনেক কাজের এটা আপনার সাইটকে বিভিন্ন হ্যাকিং Attempts থেকে রক্ষা করবে। প্লাগিংটার নাম “Better WP Security” এই লিংকে এটার ব্যপারে বিস্তারিত জানতে পারবেন।add_filter('login_errors', create_function('$a',"return null;"));
# Feed burner এ আপনার আর এস এস ফিড এড করুন। সাইটে আপলোডকৃত ইমেজ গুলো যাতে রেজুলেশন ঠিক রেখে সাইজ অপটিমাইজ করা যায় সেই জন্য স্মাসইট (smushit plugin)প্লাগিন টা ইউজ করুন।
# এছাড়া আপনার ইউজার প্রফাইলটা প্রয়োজনীয় ডাটা দিয়ে এডিট করে নিন। আরেকটা কথা, সোসিয়াল শেয়ারের জন্য সোসিয়াল সেয়ারিং প্লাগিন এড করুন।
# সার্ভারের সমস্যা, হ্যাকিং কিংবা হোস্ট পরিবর্তন অথবা ভুলে ফাইল ডিলিট হওয়ার মত ঘটনা এড়াতে নিয়মিত সাইটের ডাটাবেস ব্যাকআপ নেওয়ার জন্য এই wordpress database backup প্লাগিনটা ইউজ করুন। সাথে wp-content টাও কিন্তু ব্যাকআপ নিতে হবে
# এছাড়া লোডিং টাইম কমানো প্লাস কেশ ডিলিট করার জন্য wp3 total cache প্লাগিন ব্যবহার করতে পারেন। এটা অনেক কাজের।
এরপর, এসইও প্লাগিনগুলো এক্টিভ করে দিন, যেমন wordpress seo by yoast, google xml sitemaps. সাইটটি এবার গুগল এনালিটিক্স এড করুন-মারজ করুন। পাশাপাশি আপনার সাইটম্যাপটি বিভিন্ন ওয়েব মাস্টারে এড করুন এবং কোন পেজ কিংবা ফোল্ডারকে সার্চ ইঞ্জিনে এক্সেস দিবেন কিংবা দিতে চান সেটার জন্য সি প্যানেলে লগিন করে public html/ root ফোল্ডারে টেক্সট আকারে robots.txt ফাইল এড করুন।
আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে আমি পরিপূর্ন একটি স্যাম্পল robots.txt ফাইল আপলোড করে দিলাম, ডাওনলোড করে দেখে নিতে পারেন। এখানে ক্লিক করে Robots.txt ফাইলটি ডাউনলোড করুন।
উপরের সব কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে এবার সাইটটিতে নিয়মিত কন্টেন্ট বা আর্টিকেল দিতে থাকুন। আর অবশ্যই মনে করে ইন্ডেক্স অন করে দেবেন কিন্তু! কন্টেন্ট ইনডেক্স হতে থাকলে কিছু দিন পর গুগলে সার্চ করে ক্যানোনিকাল প্রবলেম আছে কিনা চেক করতে পারেন, ওখানে যদি সেম পেজের জন্য www এবং non www দুইটা ভার্শন দেখেন তবেই বুঝতে হবে প্রবলেম আছে… দেন ফিক্স করতে হবে।
এরপরও আরও অনেক কিছু আছে, সময় করে আরেকদিন দেখাবো…
আপাতত এইগুলোই করুন ।



No comments:
Post a Comment